সাভারে বাংলাদেশ গার্মেন্টস শ্রমিক এন্ড শিল্প শ্রমিক ফেডারেশনের উদ্যোগে যথাযথ মর্যাদায় পালিত হলো মহান মে দিবস।
বৃহস্পতিবার ( পহেলা মে) সকালে বাংলাদেশ গার্মেন্টস শ্রমিক এন্ড শিল্প শ্রমিক ফেডারেশনের উদ্যোগে সংগঠনের একটি কার্যালয়ের সামনে থেকে শুরু হয়ে আরিচা মহাসড়ক প্রদক্ষিণ করে রানা প্লাজার সামনে গিয়ে শ্রমিক সমাবেশ ও র্যালীটি শেষ হয়।
সমাবেশ ও র্যালীটিতে সভাপতিত্ব করেন, বাংলাদেশ গার্মেন্টস এন্ড শিল্প শ্রমিক ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি শ্রমিক নেতা রফিকুল ইসলাম সুজন।
সভাপতির বক্তব্যে শ্রমিক নেতা রফিকুল ইসলাম সুজন বলেন, শ্রমিক ছাটাই- নির্যাতন, মামলা- হামলা বন্ধ, ছাঁটাইকৃত শ্রমিকদের পুর্নবহাল ও সকল বন্ধ কারখানা চালু, গার্মেন্টস শ্রমিক সহ সকল শিল্প কারখানায় রেশনিং চালু, জাতীয় মজুরী ঘোষনা, ইপিজেড শ্রমিকদের শ্রম আইন অর্ন্তভুক্ত সহ সকল শিল্প কারখানায় ট্রেড ইউনিয়ন অধিকার নিশ্চিত। আই এল ও কনভেনশন ৮৭ ও ৯৮ বাস্তবায়ন এবং ১০২,১২১, ১৮৯ ৩১৯০ অনুস্বাক্ষর করার দাবি জানান।
তিনি আরো বলেন ডার্ড গ্রুপের বন্ধ করে দেওয়া সাভার এবং গাজীপুরে বকেয়া বেতন- ভাতা ও আইনানুগ পাওনাদি পরিশোধ না করে বে আইনীভাবে ০৫ টি প্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষনা করে ওই ১৪ হাজার শ্রমিক কর্মচারী কর্মরত ছিলেন। শ্রমিকদের বিক্ষোভের মুখে ২৮ শে নভেম্বর-২০২৩ইং সরকার ত্রিপক্ষীয় সমঝোতা চুক্তি করে” ১৮ মাস অতিবাহিত হলেও সেই চুক্তি এখন পর্যন্ত বাস্তবায়ন হয়নি। পরবর্তীতে অর্ন্তবর্তীকালীন সরকার ১৩ কোটি টাকা সুদমুক্ত লোন দিলেও বিভিন্ন অনিয়মের কারনে শ্রমিক-কর্মচারীগন নাম মাত্র কিছু কিছু টাকা পেয়েছে। সরকারের কাছে ডার্ড গ্রুপের কতৃপক্ষ ২৭ কোটি টাকার হিসাব দিলেও শ্রমিক- কর্মচারীদের পাওনা আরো অনেক বেশী। অর্ন্তবর্তীকালীন সরকারের মাননীয় শ্রম উপদেষ্টা ৭ ই মে-২০২৫ইং এর মধ্যে ডার্ড গ্রুপসহ ০৬ টি প্রতিষ্ঠানে সকল শ্রমিক-কর্মচারীদের বেতন- ভাতা ও আইনানুগ পাওনা পরিশোধ করার নির্দেশ দিয়েছে। সরকারের নির্দেশনা অমান্য করলে বৃহত্তর আন্দোলন কর্মসূচির মাধ্যমে শ্রমিকের অধিকার বাস্তবায়ন করা হবে।
তিনি আরো বলেন, ছেইন এ্যাপারেলস ২২ ফেব্রুয়ারি ২৫ ইং তারিখ হইতে ২২ এপ্রিল ২০২৫ইং তারিখ পর্যন্ত বে-আইনী ভাবে কারখানায় লে-অফ ঘোষনা করে। বে-আইনী লে-অফ শেষে শ্রমিক- কর্মচারীগন প্রতিদিনের মত কাজে যোগদান করতে গেলে ২৩ এপ্রিল ২০২৫ইং তারিখ দেখা যায় অনির্দিষ্টকালের জন্য কারখানা বন্ধ ঘোষনা করে কারখানার গেটে একটি নোটিশ ঝুলিয়ে দেয়। উক্ত কারখানায় প্রায় ১৭৬৫ জন শ্রমিক-কর্মচারী কর্মরত আছেন। শ্রমিক-কর্মচারীদের বে- আইনী লে-অফ চলাকালীন মার্চ ও এপ্রিল-২০২৫ইং এর বকেয়া বেতন-ভাতা, ও আইনানুগ পাওনা বকেয়া রহিয়াছে। বকেয়া বেতন-ভাতা না পেয়ে শ্রমিক- কর্মচারীগন মানবেতর জীবন যাপন করছে এবং বর্তমানে কারখানা বন্ধ দেখে শ্রমিক- কর্মচারীগন দিশেহারা হয়ে পড়ছেন। অবিলম্বে বে- আইনী লে-অফ প্রত্যাহার পূর্বক বন্ধ কারখানা চালু, বকেয়া বেতন-ভাতা পরিশোধ ও শ্রমিকদের নামে হয়রানী মূলক মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারের দাবী। ইতিপূর্বে একাধিক বার ত্রিপক্ষীয় চুক্তি করার পরেও চুক্তি ভঙ্গ করে চলছে।
সংগঠনটির কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক সুমাইয়া ইসলাম বলেন, বলেন বিজিএমইএ এর ডাটাবেজের নামে শ্রমিকদের ফিংগার ব্লোক করে রেখে দিয়েছে। বর্তমানে শ্রমিকরা অন্য কোন কারখানায় চাকুরী নিতে পারছে না। অবিলম্বে ফিংগার ব্লোক নামে এই যন্ত্রটিকে প্রত্যাহারের দাবী জানাই। অন্যথায় শ্রমিকরা বৃহত্তর আন্দোলনের মাধ্যমে অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাড়াবে।
আরো তিনি বলেন, মামলা- হামলা করে শ্রমিকদের অধিকার থেকে বঞ্চিত করা যাবে না। অবিলম্বে শ্রমিক নেতা শফিউল আলম সহ ডার্ড গ্রুপের সাভার- গাজীপুর, সাভারের ছেইন এ্যাপারেলস লিঃ এর ৯০০ শ্রমিক সহ সকল শ্রমিকের হয়রানী মুলক মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার করার দাবি জানান তিনি।
ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় সাধারন সম্পাদক সুমাইয়া ইসলাম আরো বলেন, নারী শ্রমিকদের জন্য ৬ মাসের মাতৃকল্যান ছুটির আইন পাশ, নারী ও শিশুদের নিরাপত্তা, শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত কর। শ্রমিকের নিয়োগ পত্র প্রদান, পরিচয় পত্র প্রদান, গনতান্ত্রিক শ্রম আইন প্রনয়ন, শ্রম আদালতে ১৫০দিনের মধ্যে মামলা নিষ্পত্তি, ৯% ইনক্রিমেন্ট সহ সরকার ঘোষিত শিল্পে ১৮ দফা চুক্তি বাস্তবায়ন” রানা প্লাজা, তাজরীন ফ্যাশনস এ হত্যা কান্ডের সাথে জড়িত ব্যক্তিদের দৃষ্টান্ত মূলক শাস্তি, আহতদের সু- চিকিৎসা, একযুগ আয়ের সমান ক্ষতিপুরণ, ক্ষতিগ্রস্থ শ্রমিক-পরিবারকে পুর্নবাসনের দাবী জানান।
এসময় আরো উপস্থিত ছিলেন, কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক সুমাইয়া ইসলাম, পারভীন আক্তার, মোঃ আবু কালাম, স্থানীয় নেতা আলী আকবর, ডার্ড গ্রুপের শ্রমিক আলী আকবর, ছেইন এ্যাপারেলস লিমিটেডের শ্রমিক আসিক মিস্ত্রী, মোঃ মোবারক, ইয়াসমিন আক্তার প্রমুখ।